অবৈধ টাকাসহ আটক হওয়া যশোরের বেনাপোল কাস্টম হাউসের বরখাস্তকৃত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খন্দকার মুকলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।

দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে ওই টাকা নিজ দখলে রাখা ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এনে ১৩ই ফেব্রুয়ারি রোববার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা করা হয়। দুদক যশোরের উপপরিচালক আল আমিন বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। আসামি খন্দকার মুকুল হোসেন টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার কাকড়াজান গ্রামের খন্দকার আহসান হাবীবের ছেলে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের ২৬ আগস্ট সকাল আটটায় ইউএস বাংলার একটি বিমানে যশোর থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে মুকুল যশোর বিমান বন্দরে পৌঁছান। বোর্ডিং পাসের সময় যশোর বিমান বন্দরের স্ক্যানিং মেশিনে মুকলের ব্যাগে বিপুল পরিমাণ নগত টাকা থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে।

ওইসময় বিমান বন্দরের সিকিউরিটি কর্মকর্তা টাকা বহনের কারণ জানতে চাইলেই তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মুকুল সিকিউরিটি কর্মকর্তার সাথে অশোভন আচরণ করেন। একপর্যায়ে সিকিউরিটি কর্মকর্তা তাকে নির্দিষ্ট বিমানে উঠানের ব্যবস্থা করে হজরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এভিয়েশন সিকিউরিটি গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান ।

মুকুল ঢাকায় পৌঁছালে এভিয়েশন সিকিউরিটি গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাকে তল্লাশি করে ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা উদ্ধার করেন। তখন টাকার উৎসের ব্যাখ্যা দিতে তিনি ব্যর্থ হন। পরে মুকুল কে ঢাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ঢাকা কাস্টমস তাকে বেনাপোল কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করে। তখন বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এঘটনা জানতে পেরে যশোরের দুদক কর্মকর্তারা বেনাপোল কাস্টমসে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে মুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু টাকার উৎস সম্পর্কে সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তিনি। এ বিষয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ে মামলা করার অনুমতি প্রার্থনা করা হয়। অনুমতি পাওয়ার পর রোববার এ মামলা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপপরিচালক আল আমিন বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত মামলার আবেদন জানান। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ায় দুদক কার্যালয়ে এ মামলা করা হয়েছে।

আইন অনুযায়ী এ মামলার নথি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, তদন্তকালে এ ঘটনার সাথে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রমাণ পেলে তাদেরেকও এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মুকুল বর্তমানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হেফাজতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক। যদি তাকে আটকের প্রয়োজন মনে হয় তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, খন্দকার মুকুল হোসেন ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ক্যাশিয়ার পদে যোগদান করেন। এরপর তিনি ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি ২০২০ সালের নভেম্বরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে যোগদান করেন।

যোগদানের পর বেনাপোল বন্দরের ৩১ নম্বর ওয়েব্রিজসহ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সাধারণ পূর্ত শাখায় দায়িত্বপালন করতে থাকেন। এর আগে তিনি ঢাকায় চাকরি করার সুবাধে বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এই সুযোগে তিনি বেনাপোল কাস্টমস হাউজে চাকরি করে দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।